বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

পিরামিড কি ভিনগ্রহী এলিয়েনদের বানানো স্থাপত্য?

বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩
116 ভিউ
পিরামিড কি ভিনগ্রহী এলিয়েনদের বানানো স্থাপত্য?

কক্সবাংলা ডটকম(১০ আগস্ট) :: মিসরীয় সভ্যতা জ্ঞান-বিজ্ঞানে কত দূর উন্নতি করেছিল, তার বড় নিদর্শন পিরামিড। আজ থেকে সাড়ে চার হাজার বছর আগে কীভাবে এগুলো তৈরি হলো, তা নিয়ে জল্পনাকল্পনার শেষ নেই। এলিয়েন কিংবা দেবতাদের মিথলজি ভেঙে আজকের বিজ্ঞান অনেকখানিই উদ্ধার করতে পেরেছে পিরামিড-রহস্য…

একটা সময় পিরামিড-রহস্য ভেদ করা অসম্ভব মনে করা হতো। এই সুযোগে গুজব ব্যবসায়ীরা একে ভিনগ্রহীদের তৈরি স্থাপত্য বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। সুইস লেখক এরিক ফন দানিকেনের মতো কিছু মানুষ পিরামিডের সঙ্গে এলিয়েনের মিথ জড়িয়ে লিখেছেন অজস্র বই। সেসব বই দেদার বিকিয়েছে বিশ্ববাজারে, কোটি কোটি ডলার ঘরে তুলেছেন লেখক আর তাঁদের প্রকাশকেরা। কিন্তু দিন বদলেছে, প্রযুক্তি আর গবেষণার সুবর্ণ সময়ে মানুষ ভাঙতে পেরেছে পিরামিড-রহস্যের আগল। এখন আর একে ভিনগ্রহী প্রাণী বা দানবাকৃতির মানুষের তৈরি স্থাপনা বলে চালানোর উপায় নেই। পিরামিড তৈরির জন্য প্রাচীন মিসরীয়দের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, কারিগরি দক্ষতার জয়গান করছে আধুনিক বিজ্ঞান। অনেকখানিই উদ্ঘাটিত হয়েছে, কীভাবে তৈরি হয়েছিল এসব অক্ষয় কীর্তি।

২.

পিরামিডের ইতিহাস মৃত্যুমোড়ানো। তাজমহলের মতো ভালোবাসার প্রতীক নয় পিরামিড। প্রাচীন মিসরে ফারাও ও তাদের পারিবারিক কবরের রক্ষাকবচ এগুলো। পিরামিডের আগেও কবর ছিল রক্ষাকবচ। মাস্তাবা নামে একধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড ঘর তৈরি করে তার ভেতর লাশ রাখা হতো। মাস্তাবা আসলে চারকোনা ইট-পাথরের স্তূপের মতো। মৃত ব্যক্তির মর্যাদার ওপর নির্ভর করে এগুলো তৈরি হতো মাটি, ইট বা বিভিন্ন ধরনের পাথর দিয়ে। হ্যাঁ, সেকালেই ইট তৈরি করতে জানত মিসরীয়রা। মাটি, খড়, বালু ইত্যাদি দিয়ে ইট তৈরি হতো। ফারাওদের মাস্তাবার দেয়াল তৈরি হতো লাইমস্টোন দিয়ে। এসব লাইমস্টোন বা চুনাপাথর পাওয়া যেত বর্তমান কায়রো ও এর আশপাশের অঞ্চলে। তবে এসব মাস্তাবা তৈরিতে খুব বেশি স্থাপত্যশৈলী দেখানো হতো, তা কিন্তু নয়।

মাস্তাবার মূল কাঠামো থাকত মাটির ওপরে বসানো। অনেকটা মঞ্চ বা বেদির মতো। বাইরে থেকে দেখলে নিরেট মনে হবে। থাকত দুটি দরজা। একটা আসল, আরেকটা নকল। এসব দরজা দিয়ে ঢুকলে আপনি গিয়ে পড়বেন চারকোনা সরু টানেলের ভেতর। এই টানেলের ভেতর নামলে আর দেখতে হবে না। গভীর টানেলের ভেতর দিয়ে গিয়ে পড়বেন সত্যিকারের কবরখানায়। চারকোনা কফিনের মতো জায়গাটা। সেখানে থাকতেও পারে ফারাওয়ের মৃতদেহ। যদি মৃতদেহের হদিস পান, তাহলে ধরে নেবেন, সঠিক দরজা দিয়েই আপনি ঢুকেছিলেন। মৃতদেহের সঙ্গে মিলবে অজস্র ধনরত্ন আর ফারাওয়ের ব্যবহার্য দামি জিনিসপত্র। আর যদি কিছুই না পান অত দূর গিয়ে, ধরে নেবেন, নকল দরজা দিয়ে ঢুকেছিলেন। আবার আসল চেম্বারে ঢুকে রাজার মৃতদেহ আবিষ্কার করেও কিন্তু স্বস্তি নেই আপনার।

কারণ, খাড়া চেম্বার বেয়ে ওপরে ওঠা দুঃসাধ্য। ধনরত্নশিকারি চোর আর ডাকাতদের হাত থেকে এগুলো রক্ষার জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবুও ডাকাতদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি বেশির ভাগ ধনরত্নই।

মাস্তাবার ব্যবহার মিসরীয়রা বহুকাল করেছে। কিন্তু এগুলো তাদের নিজস্ব আবিষ্কার নয়। সেকালে দজলা ও ফোরাত (অর্থাৎ ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস) নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছিল মেসোপটেমিয়া সভ্যতা। এই সভ্যতায় মাস্তাবার প্রচলন ছিল। সেখান থেকেই এ জ্ঞান পেয়েছিল তারা।

৩.

সত্যিকারের পিরামিড তৈরির কাজটা শুরু হয় মিসরের তৃতীয় রাজবংশের রাজত্বকালের শুরুতেই। এই রাজবংশের প্রথম ফারাও ছিলেন জোসার। আগের সব ফারাওয়ের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও চেয়েছিলেন বেঁচে থাকতেই নিজের সমাধি তৈরি করতে। মাস্তাবার চেয়ে বেশি কিছু হোক, সে ভাবনা কার মাথায় প্রথম এসেছিল? জোসারের, নাকি ইমহোটেপের? এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে বিতর্ক নেই প্রথম পিরামিড তৈরির ইতিহাস নিয়ে। সবচেয়ে জনপ্রিয় মতটার কথাই আমরা বলি। জোসার চেয়েছিলেন, ব্যতিক্রম কিছু করতে। তাঁর সমাধিটা কেমন হবে, তার একটা ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ইমহোটেপকে। বলেছিলেন, এমন সমাধি যেন তাঁর হয়, যেটা বাকি সবার চেয়ে আলাদা হবে। যেন যুগ যুগ ধরে মানুষ মনে রাখে তাঁকে।

ফারাও ফরমাশ দিয়েই খালাস। কাজ তো করতে হবে ইমহোটেপকেই। ফারাও অবশ্য জানেন, দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মাথা ইমহোটেপ, তিনি ভেবে নিশ্চয়ই এমন কিছু বের করবেন, যেটা আসলে ইতিহাস তৈরি করবে। তা ইমহোটেপ করেছিলেনও।

বিশাল সব পাথরের চাঁই সরানোর কাজ করছেন শ্রমিকেরা

আর করেছিলেন বলেই পৃথিবী আজ জানতে পারছে, পাঁচ হাজার বছর আগেও মানুষের স্থাপত্যবিদ্যা কতটা প্রখর ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের যেমন আবুল ফজল, মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের যেমন চাণক্য, জোসারের তেমনি ইমহোটেপ—একাধারে প্রধান উপদেষ্টা, অর্থনীতিবিদ, স্থপতি, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক। এমন একজন লোক আশপাশে থাকলে রাজার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। মিসরের বিস্ময় পিরামিড সৃষ্টিতে ইমহোটেপের বুদ্ধি আর জ্ঞানই ইতিহাস তৈরি করেছিল।

ইমহোটেপ তখনকার রাজধানী মেমফিসের অদূরে বেছে নেন ইতিহাস তৈরির জায়গা। প্রথমে মাটির নিচে বেশ কয়েকটি ঘর। সেসব ঘরের একটিতে থাকবে ফারাওয়ের মৃতদেহ, বাকিগুলোতে রাজার ব্যবহার্য জিনিস। সতেরোটি দরজা ছিল ঘরটাতে ঢোকার জন্য। এর মধ্যে মাত্র একটা দিয়ে ঢোকা যেত, বাকিগুলো কানাগলি। লুটেরা-ডাকাতদের ধোঁকা দিতেই এ ব্যবস্থা। নিজের সমাধিকক্ষগুলো তৈরির পরেই ইমহোটেপ সিদ্ধান্ত নিলেন, এর ওপরেই তৈরি করবেন প্রস্তরফলক। সেটা এত উঁচু হবে, যেন দূর থেকে দেখেও লোকে শ্রদ্ধায় মাথা নোয়ায়।

নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ইমহোটেপ। পাথরের ওপর পাথর বসিয়ে বিশাল এক স্তম্ভ তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছয়বার জিনিসটা ধসে যায়। তাই নকশায় পরিবর্তন আনেন ইমহোটেপ। সবচেয়ে বড় পাথরখণ্ডটা তিনি বসান কবরের ঠিক ওপর। মাটির ওপর। এরপর বসালেন তার চেয়ে ছোট পাথর। এভাবে প্রতিটা ধাপেই পাথর একটু করে ছোট হয়ে গেল। সবশেষে বসল চূড়ার পাথর। ধাপে ধাপে তৈরি হলো পিরামিড। তাই এর নাম দেওয়া হলো স্টেপ বা ধাপ-পিরামিড। ২০৫ ফুট উঁচু এক সমাধিসৌধ!

জোসারের এই স্টেপ পিরামিড ছিল পুরোটাই প্রায় নিরেট। অর্থাৎ এর ভেতরে কোনো জায়গা ছিল না। তার মানে ফারাও জোসারের কবর পিরামিড দিয়ে শুধু ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তবে এই পিরামিড স্রেফ একটা পিরামিডই নয়। এটাকে পিরামিড কমপ্লেক্স বলা ভালো। কারণ, পিরামিডকে কেন্দ্র করে এর চারপাশে তৈরি করা হয় নানা রকম অবকাঠামো। এ কমপ্লেক্সের আঙিনায় ছিল মন্দির, পূজার বেদি, সুড়ঙ্গপথ, প্যাভিলিয়ন ও মাঠ। আর চারপাশটা পরিখা দিয়ে ঘেরা।

প্রথম পিরামিড তো তৈরি হলো, কিন্তু কীভাবে তৈরি হলো, এত শ্রমিকই পেলেন কোথায় ইমহোটেপ- সে কথা যথাসময়েই বলা হবে।

৪.

গিজার পিরামিড তৈরি পাথর প্রাচীন সপ্তাশ্চর্যের একটা হলো গিজার গ্রেট পিরামিড। গঠনশৈলী আর উচ্চতায় একে পিরমাডিরে রাজা করে তুলেছে। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের দিকে তৈরি এ পিরামিড। ফারাও জোসারের মতো আরেক উচ্চাভিলাষী ফারাও তখন ক্ষমতায়। তিনি ফারাও খুফু। লোকটার চাওয়া শুধু পিরামিড নয়, এমন এক পিরামিড, যা উচ্চতায় ছাড়িয়ে যাবে আগের সব কটিকে। ভবিষ্যতেও যেন এমন পিরামিড আর তৈরি না করতে পারে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে। দায়িত্ব দিলেন আত্মীয় হোমিউনুকে।

খুফু-হোমিউনুর সুবিধা অনেক বেশি ছিল জোসার- ইমহোটেপের চেয়ে। নতুন পথ তৈরির চেয়ে আরেকজনের দেখানো পথে হেঁটে এগোনো সহজ। খুফু সুবিধাটার সদ্ব্যবহার করেছিলেন ষোলো আনা। জোসারের পথে হাঁটেন ফারাও সেখেমখেত আর ফারাও খাবা। কিন্তু তাঁরা সফল হননি। সম্ভবত ইমহোটেপের মতো ক্ষুরধার মস্তিষ্কের কাউকে পাননি তাঁরা। তবে হুনি নামের এক ফারাও বেশ কিছু ধাপ পিরামিড নির্মাণ করেন। সফলভাবে। হুনি ছিলেন খুফুর পূর্বপুরুষ। কিছু ছোট ছোট পিরামিডও তৈরি হয় এর আগে-পরে। সেগুলোর উচ্চতা ৫৫ ফুটের বেশি নয় একটাও। খুফুর বাবা স্নেফেরুও বানান এমন পিরামিড। কিন্তু তাঁর মন ভরেনি। তাই রেড পিরামিড তৈরিতে মনোযোগ দেন তিনি। এটাই ছিল প্রথম সত্যিকারের পিরামিড। রেড পিরামিড তৈরি করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েন স্নেফেরু। রড-সিমেন্টের বালাই ছিল না তখন। তার বদলে ব্যবহার করা হতো চুন-সুরকি। সুতরাং স্থাপত্যবিদ্যার নানা রকম কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছিল তাঁকে। তিনি প্রথমে মেইডুম নামে একটা পিরামিড তৈরি করেন। কিন্তু এর চুনাপাথরের আবরণ পিচ্ছিল হয়ে যায়। ধসে যাওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। তাই এটিকে বাতিল করেন। পরে রাজধানী থেকে কিছুটা দূরে দাশুরে তৈরি করেন আরও দুটি পিরামিড।

স্নেফেরু দাশুর নামের একটা জায়গায় একটু অন্য রকম পিরামিড তৈরির চেষ্টা করেন। সেটা ছিল আগের ধাপ-পিরামিডের চেয়ে অনেকটা খাড়া। ভূমির সঙ্গে এর ঢালের কোণ ছিল ৬০ ডিগ্রি। কিন্তু পিরামিডের নিচের অংশ কিছুটা ধসে পড়ে, নেমে আসে ৫৪ ডিগ্রিতে। তাই পিরামিড তৈরির মাঝপথেই মাটির সঙ্গে এর কৌণিক ব্যবধান কমিয়ে ৪৩ ডিগ্রিতে নিয়ে আসেন। ফলে অদ্ভুত আকার ধারণ করে পিরামিডটি। তবে মজার ব্যাপার হলো, অদ্ভূত আকার নিয়েই প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর টিকে রয়েছে পিরামিডটি।

বিকৃত পিরামিডে নিজেকে সমাহিত করতে চাননি স্নেফেরু। তাই দাশুরে আরেকটা পিরামিড তৈরি করেন তিনি। রেড পিরামিড। এটাকেই প্রথম সত্যিকারের পিরামিড মনে করেন মিসরতত্ত্ববিদেরা। এটা নিয়ে আর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যাননি। ৪৩ ডিগ্রি কোণ করেই পিরামিড তৈরি করেন। শেষ পর্যন্ত সফলভাবে এর নির্মাণকাজ শেষ হয়। রেফেরুর মৃতদেহ এই রেড পিরামিডেই সমাহিত করা হয়।

ধাপ পিরামিড অনেকটাই নিরেট ছিল। এ পিরামিডে মৃতদেহ রাখার চেম্বার তৈরি করা হতো মাটির নিচে। এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনেন স্নেফেরু। তিনিই প্রথম মৃতদেহ রাখার চেম্বার তৈরি করেন ভূপৃষ্ঠের ওপরে।

স্নেফেরুর সাফল্য তাঁর ছেলেকে উদ্বুদ্ধ করেছিল গ্রেট পিরামিড তৈরিতে। খুফুর সুবিধা ছিল স্নেফেরুর চেয়ে অনেক বেশি। ধাপ-পিরামিড ছিল উদাহরণ হিসেবে। বাবার তৈরি তিনটি পিরামিডের কৌশলও তাঁর জানা। তাই নতুনত্ব আনা তাঁর জন্য সহজ ছিল। তিনি পিরামিডকে একেবারে ভূপৃষ্ঠে নির্মাণ করে, এর নির্মাণকাজ শুরু করেন ভূগর্ভের ভেতর থেকে। ফলে ৪৮১ ফুট উঁচু করে তৈরি করতে কোনো অসুবিধা হয়নি। ভূগর্ভের নিচে শক্ত ভিত ছিল বলেই ৫১.৫ ডিগ্রি কোণেই আজও টিকে আছে গিজার গ্রেট পিরামিড।

৫.

এত বড় একটা পিরামিড তৈরি করতে নিশ্চয়ই অনেক অনেক বেশি পাথর লেগেছিল। দূর থেকে বড় বড় পাথর বহনের কাজ সোজা নয়। আর সেই কাজ একটু সহজ করার জন্য খুফু ভাবলেন, রাজধানী নয়, এমন এক জায়গায় বানাতে হবে পিরামিড, যার আশপাশে পাথরের পর্যাপ্ত জোগান আছে। আর যদি হয় জায়গাটা বেশ উঁচু, তাহলে সোনায় সোহাগা। খুঁজেপেতে রাজধানী মেমফিস থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গিজা অঞ্চলটাকেই বেছে নেন তিনি। জায়গাটা উঁচু, পাশেই চুনাপাথরের খনি। সমস্যা হলো দূরত্বটা। ফারাওদের সমাধি রাজধানীতে হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুফুর উদ্দেশ্য সবার চেয়ে সেরা জিনিসটা বানানো, তাই একটা ব্যাপারে ছাড় দিলেন। গিজাতেই বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন পিরামিড। দূরত্ব কমানোর জন্য ব্যবহার করলেন নীল নদকেই। মেমফিস নীল নদের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল। দূরত্ব কমানোর জন্য নীল নদ থেকে গিজা পর্যন্ত একটা খাল খনন করলেন খুফু। নৌ যোগাযোগ স্থাপিত হলো। সুতরাং ১৫ কিলোমিটার দূরত্বটাকে আর বাধা মনে হলো না খুফুর কাছে। তা ছাড়া গিজাতেই বানিয়ে নিলেন একটা অস্থায়ী রাজপ্রাসাদ। পরের ৩০ বছর ধরে ধীরে ধীরে নির্মাণ করা হলো গিজার পিরামিড।

৬.

এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ। নিশ্চয়ই অনেক লোকের দরকার। তা বৈকি। ইতিহাসের জনক গ্রিক দার্শনিক হেরোডোটাস মিসর ভ্রমণ করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে। সেখানকার জনশ্রুতি শুনে লিখেছিলেন গিজার পিরামিডের ইতিহাস। তাতে লেখা, প্রায় এক লাখ ক্রীতদাস অবিরাম খেটে তৈরি করেছিল গিজার পিরামিড। কিন্তু ১৯৯০ সালে মিসরীয় আর্কিওলজিষ্ট জাহি আব্বাস হাওয়াস ভুল প্রমাণ করেন হেরোডোটাসকে। আশপাশের এলাকা খনন করেন। খুঁজে পান নতুন নিদর্শন। একটা শ্রমিকপল্লির সন্ধান পাওয়া যায়। পাওয়া যায় শ্রমিকদের কঙ্কাল, তাঁদের ব্যবহার্য জিনিস, থাকার ঘর, তৈজসপত্র, চিকিৎসালয়। এসব নিদর্শন থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়াস হিসাব করে দেখান, ১ লাখ নয়, ১০ হাজারের মতো শ্রমিক সেখানে কাজ করেছেন ৩০ বছর ধরে। পরে এই সংখ্যা বেড়েছে। এখন মনে করা হয়, ২৫ হাজার শ্রমিক এ কাজ করেছিলেন।

হাওয়াস বলেছিলেন, শ্রমিকেরা স্রেফ ক্রীতদাস নন, বরং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাজ করা শ্রমিক। সম্ভবত তাঁরা ফারাওয়ের সৈন্য বাহিনীর একাংশ। সেখানে শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া, এমনকি চিকিৎসালয়ের সন্ধানও পেয়েছিলেন। বলে দাবি করেন হাওয়াস। পরে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক, ইজিপ্টলজিস্ট রোজালি ডেভিড শ্রমিকদের কঙ্কাল রাসায়নিক ও কম্পিউটার সিমুলেশন করে দেখিয়েছেন, কেমন ছিল শ্রমিকদের চেহারা। সেটা দেখে বোঝা যায়, এদের শারীরিক গঠন মোটেও কৃতদাসদের মতো নয়। এদের কঙ্কালের সিটি স্ক্যান করে পাওয়া গেছে আরও চমকপ্রদ তথ্য। অনেকের ভাঙা হাড় পাওয়া গেছে। সেগুলো রীতিমতো চিকিৎসা করে জোড়া দেওয়া হয়েছে। তার মানে, জাহি হাওয়াসের ধারণাই ঠিক। এদের শ্রমিকদের জন্য সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও ছিল। কৃতদাসদের দিয়ে করানো হলে এ ব্যবস্থা থাকত না।

৭.

পিরামিড তৈরির সবচেয়ে সমস্যা ছিল পাথর বহন। বিশাল বিশাল পাথরের চাঁই বহুদূর থেকে নিয়ে আসার মতো যন্ত্রপাতি আর প্রযুক্তি সেকালে আদৌ কি ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর মিলতে সময় লেগেছে। তাই হয়তো মিসর নিয়ে মানুষ এত এত রহস্যের জাল বুনেছে। বেশির ভাগ পিরামিড তৈরি হয়েছে এমন সব জায়গায়, যার আশপাশে প্রচুর পাথরের জোগান আছে। বহুদূর থেকে আসলে বয়ে আনা হয়নি পাথর। আনা হয়েছে আশপাশ থেকে। যেমন খুফু গ্রেট পিরামিড কেন গিজায় বানালেন। তাঁর বাবা স্নেফেরুর পিরামিডগুলো বানিয়েছিলেন। দাশুরে। এর কাছাকাছি কোনো জায়গায় খুফু পিরামিড বানাতে পারতেন। তা না করে তিনি কেন গিজায় পিরামিড বানালেন, তার কারণ আগেই বলেছি — পাথরের পর্যাপ্ত জোগান। আসলে দাশুরের আশপাশের খনিগুলোতে পাথরের জোগান শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই গিজাকে বেছে নেন খুফু। পর্যাপ্ত পাথরখনির কারণেই। সবাই এ সুবিধাটা পায়নি। দূর থেকেও পাথর বহনের নজির আছে পিরামিডগুলোতে।

পাথর সহেজ নৌপথে পরিবহন করা যায়। ভেলাজাতীয় জিনিস কিংবা বড় বড় নৌকা তৈরি করতে পারত মিসরীয়রা। ভাসমান কাঠ দিয়ে তৈরি করত ভেলা বা নৌকা। তার ওপর পাথরগুলো বেঁধে ছেড়ে দেওয়া হতো নদীতে। সেসব ভেলার সঙ্গে দড়ি বেঁধে গুন টানার মতো টেনে নেওয়া হতো নদীর কিনার থেকে। কখনো কখনো গবাদিপশুও ব্যবহার করা হতো গুন টানার কাজে। তাই চুনাপাথরের খনি অনেক দূরে হলেও সমস্যা ছিল না।

ক্যাপশন : পিরামিড তৈরির সময় নৌকা আর নদীপথ রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

তবে অল্প দূরত্বে নেওয়াও কম কঠিন কাজ নয়। এই কঠিন কাজটা মিসরীয়রা করার জন্য একটা বিশেষ জিনিস তৈরি করেছিল। পাথরের চেয়ে বড় মাপের কাঠের মাচা তৈরি করা হয়েছিল। মাচাগুলো অনেকটা বিশালাকার স্লেজ গাড়ির মতো। পাথরের চাঁইগুলো ঢালু জায়গা থেকে গড়িয়ে তোলা হতো মাচার ওপর। নৌকার নিচে পানি আছে। পানি ঠেলে সহজেই নৌকা বাওয়া যায়। মাচাগুলো চলে কীভাবে? তা-ও আবার শুকনা বালুর ওপর।

প্রথমে মাচা চলার রাস্তায় পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে বালুকে শক্তপোক্ত করা হতো, যাতে ধসে না যায়, তার ওপর রাখা হতো গাছের গুঁড়ি। সেই গুঁড়িগুলোর ওপর দিয়ে চালিয়ে দড়ি বেঁধে টেনে নেওয়া হতো। বহু লোক একসঙ্গে দড়ি বেঁধে কিংবা ঠেলে পাথর গড়িয়ে নিত। তাই কাজটা কঠিন হলেও অসাধ্য ছিল না। মনে রাখতে হবে, একেকটা বড় আকারের পিরামিড বানাতে ১০ হাজারের বেশি লোক কাজ করেছেন একসঙ্গে। তাঁদের মিলিত শক্তি কম নয়। তা সত্ত্বেও পিরামিড যখন উঁচু হতে হতে কয়েক শ ফুট হয়ে গেছে, তখন অত উঁচুতে কীভাবে তোলা হতো পাথর?

আসলে এ নিয়ে প্রত্নতত্ত্ববিদেরাও দ্বিধাবিভক্ত। অনেকগুলো তত্ত্ব তাঁরা খাড়া করেছেন। সেগুলোর প্রতিটিই যুক্তিযুক্ত। তবে এটা ঠিক, সব পিরামিড একই পদ্ধতিতে তৈরি হয়নি। দিন যত এগিয়েছে, বদলেছে কৌশলের ধরন।

পিরামিড তৈরির একটা জনপ্রিয় তত্ত্ব হলো র্যাম্প থিওরি। এ পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হতো ঢালু পথ, যা পিরামিড কাঠামোর সঙ্গে লাগানো। এটা দেখতে গ্যারেজে গাড়ি ঢোকানোর জন্য পথের মতো। সমতল ঢালু পথ। এই পথে পাথরগুলোকে টেনে ওপরে ওঠানো হতো।

আরেকটা হলো সুইচব্যাক পদ্ধতি। এ পদ্ধতি অনেকটা জিগজ্যাগ পদ্ধতিতে পিরামিডের চারপাশে তৈরি করা হতো র্যাম্পগুলো। অনেকটা প্যাঁচানো ধাপহীন সিঁড়ির মতো। পিরামিডের নির্মাণকাজ শেষ হলে ধ্বংস করে ফেলা হতো সব কটি র্যাম্প।

অন্যদিকে পিরামিডের চারপাশে পরিখা খননেরও একটা কারণ বের করে ফেলেছেন গবেষকেরা। পিরামিডের চারপাশে বড় পাথরগুলো সরানোর কাজটাও কম ঝক্কির ছিল না। তাই ভেলায় বেঁধে সহজেই এপাশ থেকে ওপাশ করানো যেত পরিখার পানিতে ভাসিয়ে।

৮.

পাথর না হয় তোলা হলো। কিন্তু খনি থেকে পাথর তুলেই কি সেটা ব্যবহার করা যায়? একেক পাথরের তো একেক রকম আকার। বিল্ডিং ব্লক হিসেবে মোটেও নানা রকম, নানা আকারের পাথর নিলে চলে না। ইটের মতো একই আকারের একই চেহারার পাথর দরকার। সেটা পেতে হলে কাটতে হয় পাথরকে। মিসরীয়রাও পাথর কাটত। কিন্তু সেটা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার ছিল তাদের জন্য। খুফুর পিরামিড যখন তৈরি হচ্ছে, তখনো শুরু হয়নি লৌহযুগ। অর্থাৎ লোহার ব্যবহার শেখেনি মানুষ। তাই একালের মতো লোহার ছেনি বা হাতুড়ি ছিল না। একটা বিকল্প ছিল তাদের হাতে, সেটারই সদ্ব্যবহার করে তারা। তামার ব্যবহার জানত খুফুর আমলের লোকেরা। একটা সময় পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন শুধু তামা দিয়েই বুঝি ছেনি বা অন্যান্য ধারালো সরঞ্জাম তৈরি করা হতো। কিন্তু তামা লোহার মতো শক্ত-পোক্ত নয়। নমনীয়। তামাকে সহজেই বাঁকানো যায়। কিন্তু বিশেষ উপায় বের করে ফেলেছিল মিসরীয়রা। তামার সঙ্গে তারা ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করত আর্সেনিক। সেগুলো ব্যবহার করেই পাথর কাটার ব্যবস্থা করেছিলেন মিসরের প্রাচীনকালের শ্রমিকেরা। ব্রিটিশ প্রকৌশলী ও মিসরতত্ত্ববিদ ডেনিস স্ট্রোকস এক ডকুফিল্মে জানিয়েছেন সে কথা।

এসব ছেনি দিয়ে চুনাপাথর কাটা যেত সহজেই। কিন্তু গিজার ছোট পিরামিডের ভেতরে পাওয়া গেছে বড় বড় সব গ্রানাইট পাথরের চাই। গ্রানাইট হলো হীরার পর পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন বস্তু। সুতরাং তামা- আর্সেনিকের সংকর ধাতু দিয়ে এ পাথর কাটা অসম্ভব। এসব পাথর কেটে ব্লক তৈরি করতে হলে দরকার করাতের মতো বড় কিছু। সেটাও বানাতে শিখেছিল মিসরীয়রা। তারা লম্বা তামার পাতের (আর্সেনিক মিশ্রিত) একটা প্রান্ত ঘষে ব্লেডের মতো ধারালো করে নিত। করাতের মতো দাঁতালো নয় এমন ধাতব ব্লেড। কারণ, দাঁতালো করাতের পক্ষে গ্রানাইট কাটা সম্ভব নয়। ধাতব ব্লেডের দুই মাথায় দড়ি বেঁধে দুই দিক থেকে দুজন টানত করাতের মতো করে। একটা ব্লক তৈরি করতে প্রায় সময় লাড়ত সাত মাস। এ জন্যই পিরামিড তৈরিতে এত সময় লেগেছে।

৯.

ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাপজোখটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তারা কাজে লাগিয়েছিল জ্যোতির্বিদ্যা। আকাশের তারাদের নিয়ে তাদের উৎসাহ ছিল। করত মহাকাশচর্চাও। দিক ঠিক করত তারা দেখে। গ্রেট পিরামিড তৈরিতেও তারা নক্ষত্রের সাহায্য নিয়েছিলেন বলে মনে করেন মিসরতত্ত্ববিদেরা। তারাদের সাহায্যে পাই টু পাই দিক মিলিয়ে চারটি হেলানো তল চারদিকে বসাতে সফল হয় মিসরীয়রা।

গিজার গ্রেট পিরামিড কিন্তু শুধুই একটা পিরামিড নয়। এখন তিনটি বড় পিরামিড আছে, তার পাশেই তিনটি ছোট পিরামিড। বড় পিরামিড তিনটি একই সরলরেখায় থাকলে ব্যাপারটা সুন্দর হতো। কিন্তু এদের দুটি একই সারিতে হলেও একটার অবস্থান একটু এক পাশে। কেন? এ প্রশ্ন বহুদিনের। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের শুরুতেই একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করেন বেলজিয়ান মিসরতত্ত্ববিদ রবার্ট বাউভাল। তিনি যুক্তি দেন, আকাশের অরিয়ন নক্ষত্রমণ্ডলের প্রধান তিনটি তারা আলনিটাক, আলনিলাম আর মিলনামা। মিসরে রাতে যখন এ তারাগুলো দেখা যায়, তখন তিনটি বড় পিরামিডের চূড়া বিন্দুর ওপর এ তিনটি তারার অবস্থান পুরোপুরি মিলে যায়। তিনটি পিরামিড একই সরলরেখায় হলে এভাবে তারাদের অবস্থানের সঙ্গে মিলত না। সম্ভবত এ তিন তারার কথাই ভেবেই খুফু পিরামিড তিনটির অবস্থান এভাবে সাজিয়েছিলেন।

পিরামিড তৈরিতে আরেকটা ব্যাপার খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা হলো লেভেলিং। পুরো ভিতের জায়গাটা পাই টু পাই সমতল না হলে এত বড় স্থাপনা সম্ভব নয়। এ জন্য পিরামিডের চারপাশে পরিখা খনন করা হয়। তাতে পানি ঢেলে দেখা হয়, এক পাশ থেকে অন্য পাশে গড়িয়ে যায় কি না। যেদিকে পানি গড়াবে, সেদিকটা নিচু। উল্টো দিকের মাটি কেটে আবার লেভেলিং করা হতো। একটা ত্রিভুজাকৃতির কাঠের শীর্ষবিন্দুতে দড়ি ঝুলিয়ে, তাতে একটা ছোট্ট ভারী বস্তু ঝুলিয়েও লেভেলিং করা হতো বলে মনে করেন ডেনি স্টোকস।

বিজ্ঞান প্রমাণে বিশ্বাসী। কিন্তু চাইলেই যেকোনো প্রশ্নের দ্রুত সমাধান পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিনের গবেষণা আর ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণের মাধ্যমেই একসময়কার অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান দিতে পারে। অনেকেই এ সময়টুকু দিতে নারাজ।

পিরামিড নিয়েও বহু গুজব ছিল বাজারে। এখনো আছে। অনেকে এর পেছনে এলিয়েনের কারসাজি খুঁজেছেন। কিন্তু গুজবে কান না দিয়ে বৈজ্ঞানিক কারণ অনুসন্ধান করলেই আসল ইতিহাস জানা সম্ভব।

116 ভিউ

Posted ২:৫৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০২৩

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com